শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
সিলেট প্রতিনিধি :: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সিলেটে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। বিশেষ করে, করোনা মাহামারীর পরে খামারীরা এই খাতে লাভ কারার স্বপ্ন দেখছিলেন। সেই স্বপ্নকে বন্যা ধুয়ে দিয়ে গেছে। বন্যার পর সিলেটের বিভিন্ন স্থানে গবাদি পশুর খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গৃহস্থসহ খামারীরা।
বন্যায় অসংখ্য গবাদি পশু হাঁস মুরগী, মৎস্য খামার আক্রান্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চারণ ভূমি। খড় ঘাসসহ গো-খাদ্য বিনষ্ট হওয়ায়, না খেতে পেরে গবাদিপশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কোথাও কোথাও গবাদিপশু মারাও গেছে। আবার গো-খাদ্য যা পাওয়া যাচ্ছে তারও দাম মাত্রাতিরিক্ত। ফলে খামারিরা এবার ঈদে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের বন্যায় সিলেটে মোট ২ হাজার ১২৮ দশমিক ১৫ একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ১ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন খড় বিনষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা। বন্যায় জেলায় ২৫৮ মেট্রিক টন ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বন্যায় পানিতে ডুবে এবং রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে ১৮টি গরু, ১২টি মহিষ, ৪৯টি ছাগল ও ২৬টি ভেড়া।
একই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট গরু আছে প্রায় ১২ লাখ। এর বাইরে প্রায় ২ লাখ ছাগল, ৬০ থেকে ৭০ হাজার মহিষ এবং ৬০ থেকে ৬৫ হাজার ভেড়া আছে। এর মধ্যে বন্যাকবলিত হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৫টি গরু, ৮ হাজার ৪৫৬টি মহিষ, ৩৮ হাজার ৮৮৮টি ছাগল এবং ১৬ হাজার ৯৩৭টি ভেড়া। বন্যাকবলিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া ১২ হাজার ৯৮৬টি গবাদিপশুকে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ৫ হাজার ৩০৪টি গবাদিপশুকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে।
গ্রামে গ্রামে কৃষকেরা শুধু কচুরিপানা খাইয়ে গরু-ছাগল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তাই বন্যার পানির সঙ্গে ভেসে আসা কচুরিপানা এখন সংগ্রহ করছেন কৃষকেরা। অনেক কৃষক নিজেদের গবাদিপশু বাঁচাতে ধারকর্জ করে টাকা এনে অন্য জায়গা থেকে খড় কিনে আনছেন। গো-খাদ্যের সংকটে অনেকে গরু-ছাগল বিক্রিও করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় গবাদিপশুর জন্য দানাদার খাবার ও খড় সরবরাহের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কৃষকেরা দাবি জানিয়েছেন।
টুকের বাজার এলাকার খামারি জাবেদ আহমেদ বলেন, করোনার ধাক্কার পর এবছর কিছু লাভের আশা করছিলেন। কিন্তু বন্যার পর পশুদের খাবার দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন। বন্যায় খড় ঘাসসহ গো-খাদ্য বিনষ্ট হওয়ায়, না খেতে পেরে গবাদিপশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
আরেক খামারি নূর মিয়া বলেন, একেতো বন্যার কারনে খড় ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে তার উপর যা পাওয়া যাচ্ছে তারও দাম মাত্রাতিরিক্ত। এভাবে চলতে থাকলে এবার ঈদে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলেই আশঙ্কা করছেন তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রুস্তম আলী বলেন, “বন্যাকবলিত এলাকায় বিস্তীর্ণ গো-চারণ ভূমি আর গবাদিপশুর আবাসস্থল তলিয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় খড়ও বিনষ্ট হয়েছে। তাই সংকট দেখা দিয়েছে। তবে বন্যার পানি নেমে গেলে আগামী পনেরো দিনের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবি হবে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া বন্যার কারণে বিভিন্ন গবাদিপশুরা বিভিন্ন সংক্রামক রোগের কবেলে পরেছে, সেগুলা দেখার জন্য আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে, টিকা দেয়া হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে খামারীরা যাতে ক্ষতির মুখে না পরেন সেজন্য ইতিমধ্যেই গবাদিপশুর তালিতা করা হচ্ছে।”
একই সাথে বিদেশি গরু যাতে বাজারে না আসতে পারে সে দিকেও খেয়ার রাখা হচ্ছে বলে জানা এই কর্মকর্তা।
বন্যা, খরা ইত্যাদি কারণে সারা বছরই গো-খাদ্যের সংকট লেগে থাকে। এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। তারমধ্যে প্রতিনিয়ত কমছে গো-চারণ ভূমি। কর্তৃপক্ষের এদিকে নজর দেয়া জরুরি। তা না হলে ভবিষ্যতে এর চরা মূল্য দিতে হবে।